শিরোনাম: |
করোনা-২
মাহবুবুর রহমান পরশ
|
মাহবুবুর রহমান পরশ মাহবুবুর রহমান পরশ তোমার নিঃশ্বাসের বিষে যখন মৃত্যুভয়ে আতংকিত-পেরেশান বিশ্বের প্রতিটি মানব সন্তান, এমনিক্ষনে বিশ্বের মুসলমানদের আস্থা, ভরসা, রহমতের বারতা নিয়ে এলো রমযানের চাঁদ। এখনো বন্ধ কাবার তাওয়াফ, জামায়াতে সালাত, মহানবীর রওজা জিয়ারত,বন্ধ রয়েছে বিশ্বের সকল মসজিদে জামায়াতে সালাত। বন্ধ রয়েছে মুসলমানদের ফরজ হজ্ব, লাব্বায়েক আল্লাহ ধ্বনিতে ভিজবেনা আরাফাতের ময়দান। দিবসে-রাত্রিতে প্রতিটি মুহূর্তে সংবাদপত্র, টেলিভিশন, মোবাইল ফোনে বিশ্বের প্রতিটি মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাসে কেবলই ধ্বনিত হচ্ছে জিকির 'করোনা'র। রোজার ইফতারের পর নামাজে দাঁড়িয়ে - শুনছি ইস্রাফিলের সিংগার মতো 'করোনা'র ভয়ংকর আওয়াজ, বেহুঁশ হয়ে লুটিয়ে পড়লাম নামাজের বিছানায়। দেখলাম পৃথিবী-আকাশ প্রলম্বিত জ্যোতির্ময় এক অশরীরী ছায়া শুভ্রকাফনে ঢাকা, রক্তের অক্ষরে লিখা 'করোনা'। জিজ্ঞাসা করলাম আর্তকন্ঠে: তুমি কি অদৃশ্য অণুজীব বিশ্বের ত্রাস, নিষ্ঠুর মরণঘাতক 'করোনা'? মিলল না উত্তর, ইংগিতে তার অনুসরণ করলাম - দেখলাম ইউরোপ, আমেরিকা, আফ্রিকা, এশিয়াসহ বিশ্বের সকল বন্দর, জনপদ, রাস্তাঘাট জনমানবশুন্য। হোয়াইট হাউজ, ক্রেমলিন, ১০ নং ডাউনিং স্ট্রীটসহ বিশ্বের সকল দরবারের আসন শুন্য। জনমানবহীন কাবাগৃহ, মহানবীর রওজা ও সকল তীর্থস্থান। তারপর দেখলাম ভয়ংকর দৃশ্য- বড় বড় শহরে গাড়ীহীন শুন্য রাস্তায় শিয়াল, কুকুর, হায়েনা, শুয়োর। একই সাথে বিশ্বের ধনী-দরিদ্র, সাদা-কালো প্রতিটি ক্ষুধার্ত মানবসন্তান কাতার বেধেঁছে খাবারের জন্য, করছে মারামারি, কাড়াকাড়ি - পৃথিবী যেন একটি মহালংগরখানা। অশরীরি ছায়াকে ভয়ার্তকন্ঠে করলাম নিবেদন, এ কিসের আলামত? জবাব এলো, এসকলই বিশ্বের মানুষের যুগ-যুগান্তরের কর্মফল। মহাকালের মহান স্রষ্টা যুগে যুগে পাঠিয়েছেন জ্ঞান-বিজ্ঞানে অগ্রসরমান শান্তির দূত, তারা রেখে গেছেন মানুষের কল্যানের জন্য মহৎ অবদান। বারবার তারা হয়েছেন অপমানিত, অপদস্থ। বিশ্বের শক্তিশালী দেশের নেতৃবৃন্দ গনতন্ত্রের নামে, মানবতার নামে করেছে প্রতারনা, করেছে মানুষের অধিকার হরন। লক্ষ লক্ষ মানুষকে করেছে গৃহহারা, করেছে নিধন। অধিকার প্রদানের নামে করেছে প্রতারনা, করেছে মানুষের অধিকার হরন। নারীকে বানিয়েছে পণ্য, সমস্ত বিশ্বকে বানিয়েছে বিত্তশালীদের ক্যাসিনো। পবিত্র কাবা তাওয়াফ, ওমরা,হজ্ব, মহানবীর রওজা জিয়ারতের নামে - অর্থের প্রাচুর্য্য দেখাতে বড় বড় নামীদামী হোটেলে করেছে আবাসন। মহান স্রষ্টার কাছে প্রার্থনার নামে, নিজেকে উৎসর্গের নামে করেছে প্রতারনা। মসজিদগুলো হয়েছে মুনাফিকদের আসর। অশরীরি ছায়াকে আবার জিজ্ঞাসা করলাম - তুমি কে? কি তোমার পরিচয়? জবাব এলো: আমি বলতে কিছুই নাই পরিচয়, আমি কেবলই মহাকালের মহান স্রষ্টার নির্দেশ, তাঁর কাছে মানুষের জ্ঞান বিজ্ঞান, বিশ্বের সকল শক্তি ও সম্পদ তুচ্ছ-অসাড়। লক-ডাউন, লক-আউট,মানুষের জ্ঞান-বিজ্ঞান,কলা-কৌশলের সাধ্য নাই প্রতিহত করা তাঁর নির্দেশ। লক-ডাউন করলে থেমে যাবে সকল উৎপাদন, থেমে যাবে সকল শক্তির চাকা, ক্ষুধার্ত মানুষের ঢল নামিবে পথে, ব্যর্থ হবে সকল প্রশাসন। আবার লক-আউট করলে করোনায় আক্রান্ত হয়ে পড়ে থাকবে কোটি কোটি মানুষের লাশ। মহাকালের মহান স্রষ্টার নির্দেশে সূর্য্য, চন্দ্র, গ্রহ, নক্ষত্র, ব্ল্যাকহোল- সকল মহাজাগতিক ক্রিয়া চলছে নিখুঁত। তাঁর খেয়ালে হতে পারে পৃথিবীর যেকোন পরিবর্তন, বিবর্তন। তাই আসুন বিশ্ববাসী, নিজেদের জ্ঞান-গরিমা, সম্পদ-শক্তির অহংকার করি বিসর্জন, চাই পরম করুণাময়ের ক্ষমা ও অনুগ্রহ। পরিশেষে ছায়া শরীরকে করি মিনতি, আমাকে গ্রহণ করো। ছায়া শরীর মৃদু হেসে হলো অন্তর্ধান। লেখক মাহবুবুর রহমান জনশক্তি মন্ত্রনালয়ের সাবেক মহাপরিচালক দেশসংবাদ/প্রতিনিধি/এনকে |
আপনার মতামত দিন
|