শিরোনাম: |
রংপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান সিদ্দিকী রনির বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তুলে মামলা করেছেন এক স্কুল শিক্ষিকা।
অভিযোগ উঠেছে, বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে স্কুল শিক্ষিকার সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন এবং ভুয়া কাজী অফিসে বিয়ে রেজিস্ট্রির মাধ্যমে প্রতারণা করে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। কিন্তু পরবর্তীতে ওই শিক্ষিকাকে স্ত্রীর মর্যাদা দিতে আপত্তি তুলে দলীয় প্রভাবে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখাতেন মেহেদী হাসান সিদ্দিকী রনি।
রোববার (৬ সেপ্টেম্বর) সকালে মামলা দায়ের করার বিষয়টি নিশ্চিত করেন রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুর রশিদ।
তিনি জানান, গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় ধর্ষণের অভিযোগে মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে। একই সঙ্গে মামলার বাদী স্কুল শিক্ষিকাকে থানার ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে নেয়া হয়েছে।
এদিকে মামলার এজাহারে স্কুল শিক্ষিকা অভিযোগ করেন, ২০১৭ সালে রংপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান সিদ্দিকী রনির সঙ্গে তার পরিচয় হয়। পরিচয়ের পর থেকে তাদের মাঝে ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। রনি তাকে বিয়ে করার প্রলোভন দেখিয়ে ঢাকা, কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে গিয়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে। এ ছাড়াও বিভিন্ন সময় কাজের কথা বলে ১৮ লাখ টাকা নিয়েছে। এর পরেও বিয়ে করার কথা বললে বিভিন্ন টালবাহানা শুরু করেন রনি। পরে তার বন্ধু-বান্ধব ও স্বজনদের চাপে ২০১৯ সালের ১৮ এপ্রিল নীলফামারীতে বিয়ে করার জন্য নিয়ে যায়। সেখানে নীলফামারী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সজল কুমারের বাসায় নিয়ে গিয়ে ভুয়া কাজী এনে বিয়ে রেজিস্ট্রি করা দেখানো হয়। ওইদিন তাদের বাসর রাত হয়।
বহুবার ধর্ষণের শিকার হয়েছেন দাবি করে ওই শিক্ষিকা এজাহারে আরো উল্লেখ করেন, বিয়ের পর তাকে রনির বাবার বাড়িতে নিয়ে যাবার জন্য বললে নানান টালবাহানা করে সময়ক্ষেপন করতে থাকে। এর মধ্যে রনি ছাত্রলীগের সভাপতি ৬ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করায় আর ছাত্রলীগ করা হয়তো সম্ভব হবে না। সে কারণে জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ পেতে ২০ লাখ টাকার দরকার। সেই টাকা তাকে জোগাড় করে দেবার জন্য চাপ দিলে টাকা দিতে অস্বীকার করলে আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি প্রদান করে।
এদিকে রনিকে বিয়ে করার জন্য আবার চাপ সৃষ্টি করলে চলতি বছরের ৫ জুন তারিখে তাদের কেরানীপাড়ার বাসায় আসে সেখানে রাত্রি যাপন করে এবং তাকে ধর্ষণ করে। কথা দেয় তাকে স্ত্রীর অধিকার ফিরিয়ে দেবে বাসায় নিয়ে যাবে। কিন্তু বিভিন্ন টালবাহানা করে সময় ক্ষেপন করতে থাকে। রনি তাকে সরে যাবার জন্য বিভিন্নভাবে চাপ সৃষ্টি করে। গত ১২ জুলাই তারিখে রংপুর নগরীর গনেশপুর ক্লাব মোড় এলাকায় রনির ফুফুর বাড়িতে নিয়ে গিয়ে বলে তার সঙ্গে কোন বিয়ে হয়নি, রেজিস্ট্রি হয়নি, কোন কাবিন নামাও সম্পাদিত হয়নি দাবি করেন রনি। এরপর তার সহযোগীদের দিয়ে ওই শিক্ষিকাকে রনি তার ফুফুর বাড়ি থেকে বের করে দেন।
পুরো বিষয় লিখিত আকারে আবেদন নিয়ে মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে দেখা করলে তাকে থানায় অভিযোগ করতে বলা হয়। বাধ্য হয়ে থানায় হাজির হয়ে লিখিত এজাহার দায়ের করেন বলে জানান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওই শিক্ষিকা।
এ ব্যাপারে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রশিদ জানান, স্কুল শিক্ষিকার অভিযোগের প্রেক্ষিতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ৮ ডিসেম্বর রংপুর জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে মেহেদী হাসান রনিকে সভাপতি রাকিবুল হাসান কাকনকে সাধারণ সম্পাদক করে জেলা ছাত্রলীগের এক বছর মেয়াদি কমিটি গঠন করা হলেও অবৈধভাবে ৬ বছর ধরে রনি জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন বলে ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা অভিযোগ করেন।
দেশসংবাদ/প্রতিনিধি/এফএইচ/mmh
আপনার মতামত দিন
|