Desh Sangbad
Desh Sangbad
শিরোনাম: ■ চট্টগ্রামে কারখানায় আগুন, নিয়ন্ত্রণে ১০ ইউনিট ■ ‘ফাঁকা ঢাকায় সতর্ক থাকবে পুলিশ’ ■ গড়ে ৮২ কেজি খাবার নষ্ট করেন একজন বাংলাদেশি ■ জিম্মি নাবিকদের জন্য দুম্বা আনছে জলদস্যুরা ■ প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে বড় সুখবর দিলেন প্রতিমন্ত্রী ■ ‘বাবর ইন, শাহিন আউট’ ■ কাশ্মীরে ট্যাক্সি খাদে পড়ে নিহত ১০
কঠোর শাস্তির দাবিতে এলাকাবাসীর মামলা দায়ের
পীরগঞ্জে ২ শিশুকে সৎ মায়ের অমানবিক নির্যাতন
Published : Wednesday, 9 September, 2020 at 10:59 PM

পীরগঞ্জে ২ শিশুকে সৎ মায়ের অমানবিক নির্যাতন

পীরগঞ্জে ২ শিশুকে সৎ মায়ের অমানবিক নির্যাতন

রংপুরের পীরগঞ্জে দুটি নাবালক শিশুকে অমানবিক নির্যাতনের ঘটনায় সৎ মা বাবার বিরুদ্ধে শিশু আইনে মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় সৎ মা ও বাবা ৩ সেপ্টেম্বর তারিখে পীরগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আমলী আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে বিজ্ঞ ম্যাজিষ্ট্রেট জামিন না মঞ্জুর করে তাদেরকে কারাগারে পাঠিয়েছেন।

এদিকে, এ ঘটনার ভিডিও ও ছবি দেখে শিউরে উঠছেন অনেকেই আর যারা সরাসরি নির্যাতনের দৃশ্যগুলো দেখেছেন তারা অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন। পরবর্তীতে ছোট শিশুদেরকে সৎ মায়ের ভয়াবহ নির্যাতনের দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অনেকেই মন্তব্য করে লিখেছেন, সৎ মায়ের ফাঁসি চাই।

লিখিত অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, পিরোজপুর জেলার কাউখালী থানার শিয়ালকাঠী এলাকার মৃত মাছুদ আহমেদের মেয়ে মোছাঃ মুনিয়া আক্তারের সাথে রংপুরের পীরগঞ্জ শানেরহাট খোলাহাটী এলাকার কাজী মাহবুবার রহমানের ছেলে কাজী জাহিদুল ইসলাম সেতু’র সাথে ৮ বছর আগে ইসলামী শরিয়া ও কাবিননামা মুলে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। পরে তাদের সংসারে দুটি ছেলে সন্তান জন্মগ্রহণ করে। জীবিকার তাগিদে স্বামী জাহিদুল ইসলাম সেতু ঢাকায় চাকরি করতেন। সেতু ঢাকা থেকে ছুটি নিয়ে পীরগঞ্জ আসলে ঠুনকো বিষয় নিয়ে প্রায় সময় স্ত্রী মুনিয়ার সাথে কলহ বিবাদসহ দ্বন্দ্ব করে মার ডাং করতো। পরে জানা যায়, স্বামী কাজী জাহিদুল ইসলাম সেতু’ ঢাকায় গোপনে আরও একটি বিয়ে করেন।

গত ১২ ডিসেম্বর ২০১৯ উপ-সচিব আবেদ হোসেন মিশুক এর বাসায় শিশু সন্তান দুটিকে আটকিয়ে রেখে আমাকে জিম্মি করে আমার কাছ থেকে তালাকনামায় জোরপূর্বক স্বাক্ষর নেন। পরে সন্তান দুটিকে ফিরোত চাইলে তারা আবারও সন্তানদের মারধরসহ জীবন নাশের হুমকি দিয়ে আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। পরবর্তীতে স্ত্রী মুনিয়া কোন উপায়ান্তর না পেয়ে ঢাকা চলে যায় এবং গার্মেন্টেসে কাজ করতে থাকে।

এদিকে, চাকরি করাকালীন সময় থেকে আশপাশের পরিচিত লোকজনদের মাধ্যমে সন্তান দুটির খোজ খবর নিয়ে জানতে পারে প্রায় সময় শিশু সন্তান দুটিকে সৎ মা মামলার দুই নম্বর আসামী মোছাঃ সুমনা বেগম (২১) খুবই নির্যাতন করতো আর ঠিকমত খেতে দিতো না। ঘটনার দিন গত ৯ আগষ্ট ২০ তারিখ রাত সাড়ে ৯টার দিকে ১নং আসামীর প্ররোচনায় তার বাড়িতে সৎ মা সুমনা আমার সন্তান কাজী জোনায়েদ হোসেন (০৩) কে চর ধাপরসহ লাঠি দিয়ে মারডাং করে। এসময় অপর সন্তান মোঃ কাজী জাবীর হোসেন (০৪) কে মারডাং করে বুকে পিঠে লাথি মারে ও পূর্বেকার জখম স্থানে ধারালো ছোরা দিয়ে আঘাত করে। ঘটনার সময় পাড়াপ্রতিবেশী শিশু দুটিকে উদ্ধারের অনেক চেস্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়। তারা সে সময় জানালার ফাক দিয়ে অনেকেই ভিডিও করেছেন এবং মারডাং এর ছবি তুলেছেন। যা সংরক্ষণে রয়েছে।

পরে শিশু সন্তানকে দুটিকে নানানভাবে শারিরিক ও পৈচাষিক নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে ওই সময় আমার সম্পর্কের চাচা শ্বশুরের মেয়ে মমতাজ নিগার সঙ্গীতা চৌধুরী নির্যাতন বন্ধে জোড়ালোভাবে প্রতিবাদ করলে তাকেও মারপিট, খুনসহ মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করার হুমকি দেয়। পরের দিন তিনি পীরগঞ্জ থানায় একটি জিডি করেন। যার নং ৪৬০, তারিখ ১০/০৮/২০২০ইং। পরবর্তীতে সন্তান দুটির মা মোবাইল ফোনে বিভিন্নজনদের কাছ থেকে নির্মম নির্যাতনের ঘটনা জানতে পেরে গত ১৯ আগষ্ট ২০ইং তারিখে পীরগঞ্জ থানা এসে মামলা দায়ের করেন। মামলার ১ নং আসামী হলো কাজী জাহিদুল ইসলাম সেতু (২৯) ও ২ নং আসামী মোছাঃ সুমনা বেগম (২১)।

আরও জানা গেছে, চার মাস আগে সন্তান দুটি ঢাকায় অবস্থানকালে লোহার রড দিয়ে বড় ছেলে কাজী জাবীর হোসেনের মাথায় জোরপূর্বক আঘাত করে। পরে তাকে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেয়া হয়। যার চিকিৎসার কাগজপত্রাদি এখনও সংরক্ষণে রয়েছে। পরবর্তীতে শিশু সন্তান দুটি রাতে বিছানায় প্রস্রাব করার অপরাধে গোপনাঙ্গে সুজ দিয়ে খোচা দেয়। এসব নির্যাতনসহ নানানভাবে শিশু সন্তান দুটিকে পর্যায়ক্রমে নির্যাতন চালায় সৎ মা। এদিকে, তথ্যানুসন্ধানে আরও জানা গেছে, সন্তান দুটির জন্ম নিবন্ধনে মায়ের নাম মুনিয়া আক্তারের স্থানে সৎ মা সুমনা বেগম এর নাম ব্যবহার করা হয়েছে। যা জঘন্যতম অপরাধ। এঘটনায় ঢাকা আইন ও শালিস কেন্দ্রে অভিযোগ করা হয়েছিল। সেখানে তারা উপস্থিত হয়ে সৎ মায়ের নাম ব্যবহারের বিষয়টি উকিলের সামনে স্বীকারও করেছেন।

এদিকে, গত ৩ সেপ্টেম্বর ২০ইং পীরগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আমলী আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন সৎ মা বাবা। এসময় বিজ্ঞ আদালত জামিন না মঞ্জুর করে তাদেরকে কারাগারে পাঠিয়েছেন। এসময় শিশু দুটিও আদালতে উপস্থিত ছিল। পরে শিশু দুটিকে বিজ্ঞ ম্যাজিষ্ট্রেট দাদা কাজী শামিম হোসেন এর জিম্মায় দিয়ে দেন।

সরেজমিনে ওই এলাকায় ঘুরে জানা গেছে, শিশু সন্তান দুটির বাবা কাজী জাহিদুল ইসলাম সেতু চাকরির সুবাদে ঢাকায় থাকতেন। এ কারণে সৎ মায়ের কাছে শিশু দুটিকে রেখে গেছেন। এই সুযোগ সৎ মা বিভিন্ন সময় ছোট খাটো বিষয় নিয়ে মার ডাংসহ বিভিন্নভাবে নির্যাতন চালিয়ে আসছিল। ঘটনার দিন রাতে সৎ মা সুমনা বেগম ঘরের দরজা বন্ধ করে দিয়ে প্রথমে কাজী জাবীর হোসেনকে লাথি মারতে থাকে ও লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেঠায় এবং পরে ধারালো ছোরা দিয়ে মাথায় গুরুতর জখম করলে শিশুটি লুঠিয়ে পড়ে। পরে ছোট ছেলে জোনায়েদ হোসেনকে শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাত করে। এ কারনে তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ক্ষত তৈরি হয়।

এসব পৈচাশিক নির্যাতনের দৃশ্যগুলো আশপাশের লোকজন জানালা দিয়ে অনেকেই দেখেছেন। এসময় সকলেরই চোখে পানি এসেছিল এবং অনেকেই এ দৃশ্যগুলো মোবাইলে ভিডিও করেছেন ও ছবি তুলেছেন। ওই এলাকার খন্দকার শামীম তাবাসসুম ওরিওন, কাজী রেলা জানান, সৎ মা অমানবিকভাবে ওই ছোট শিশু দুটিকে যেভাবে নির্যাতন চালিয়ে আসছিল আমরা বিভিন্ন সময় নিষেধ করেছি। তিনি আমাদের কথা রাখেননি। ঘটনার দিন দরজা বন্ধ করে খুবই নির্মমভাবে শিশু দুটিকে পিঠিয়েছে। আমরা অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

শিশু দুটির মা মুনিয়া আক্তার জানান, আমার কাছ থেকে জোর করে তালাক নামায় স্বাক্ষর নিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার পর থেকে আমার শিশু সন্তান দুটিকে আমার কাছে নেয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করেছি, তারা দেয়নি। তারা বিভিন্ন সময় আমার শিশু সন্তান দুটিকে নির্যাতন করেছে, ঠিকমত খেতে দেয়নি। তিনি অভিযোগ করে আরও বলেন, একজন উপ-সচিব আসামীর আত্মীয়তার সুবাদে বিভিন্নভাবে প্রভাব খাটিয়ে মামলা তুলে নেয়ার জন্য আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছে। আবার ১নং আসামী জজ এর ড্রাইভারের ভুয়া পরিচয় দিয়ে আদালতসহ বিভিন্ন মানুষকে প্রভাবিত করতেছে। আমি একা, একারণে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। সার্বিক বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণের জন্য প্রশাসনের কার্যকরী হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

সন্তান দুটির দাদা কাজী শামিম আহম্মেদ মুঠোফোনে জানান, আদালত সন্তান দুটিকে আমার জিম্মায় দিয়েছে। বর্তমানে আমার কাছে তারা ভালোয় আছে। প্রথমে সন্তান দুটিকে পুলিশ উদ্ধারের পর পীরগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানকার ব্যবস্থাপত্র মোতাবেক চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে ও তারা নিয়মিত ওষুধ খাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, সন্তান দুটি ঢাকায় থাকাকালীন সেখানেও বিভিন্নভাবে নির্যাতন চালানো হতো। সেটা আমরা  কেউই জানতে পারি নাই। তবে পীরগঞ্জে অমানবিকভাবে নির্যাতনের বিষয়টি আমরা সকলেই জানি। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে সন্তানদের মাথার ও গায়ের ঘা শুকানোর পথে। অপরাধীদের আমি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। তিনি বলেন, আমিও আতঙ্কে আছি, তারা কখন কি করে। আমাকে নানানভাবে হুমকি দেয়া হচ্ছে।

এসব বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পীরগঞ্জ থানার এসআই মিলন জানান, নির্যাতনের বিষয়টি বড়ই অমানবিক। তদন্ত চলমান রয়েছে। মেডিকেল সার্টিফিকেট পেলেই উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মতামত নিয়ে আদালতে প্রতিবেদন জমা দিবো। অপরদিকে, মমতাজ নিগার সঙ্গীতা চৌধুরীর করা জিডির বিষয়ে তিনি বলেন, তদন্তের অনুমতি পেলে অবশ্যই সে বিষয়েও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

দেশসংবাদ/প্রতিনিধি/এফএইচ/mmh


আরও সংবাদ   বিষয়:  পীরগঞ্জ  


আপনার মতামত দিন
র‍্যাব সদস্যকে কুপিয়ে আসামি ছিনতাই
নরসিংদী প্রতিনিধি
Wednesday, 14 February, 2024
এবার ডিবি কার্যালয়ে মুশতাক-তিশা
নিজস্ব প্রতিবেদক
Monday, 12 February, 2024
পিটিয়ে হত্যা: দুই ছাত্রলীগ নেতা কারাগারে
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
Saturday, 10 February, 2024
আরো খবর
সর্বশেষ সংবাদ
আরো খবর >>
https://deshsangbad.com/ad/1699508455_1491666999_th.jpg
সর্বাধিক পঠিত
ফেসবুকে আমরা
সম্পাদক ও প্রকাশক
এম. হোসাইন
উপদেষ্টা সম্পাদক
ব্রি. জে. (অব.) আবদুস সবুর মিঞা
ঠিকানা
৮০/২ ভিআইপি রোড, কাকরাইল
ঢাকা-১০০০, বাংলাদেশ।
Developed & Maintenance by i2soft
যোগাযোগ
ফোন: +৮৮ ০২ ৪৮৩১১১০১-২
মোবাইল: +৮৮ ০১৭১৩ ৬০১৭২৯
ইমেইল: [email protected]
up