শিরোনাম: |
ঝোপঝাড়ে পরিণত হয়েছে বশেমুরবিপ্রবির কোটি টাকার আসবাবপত্র। দীর্ঘদিন খোলা স্থানে পড়ে থাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) স্টিল নির্মিত প্রায় ৮০০ টি হোস্টেল বেড ঘাস ও লতাগুল্মের আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে। টাকার হিসেবে এ সকল বেডের মূল্য ১ কোটিরও বেশি।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত আসবাবপত্র ক্রয় করায় এবং সংরক্ষণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না থাকাতেই মূলত স্টিল নির্মিত এসকল বেডসহ অনেক আসবাবপত্র নষ্ট হচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের সামনের অংশে প্রায় ৫০০ টি এবং পেছনের অংশে প্রায় ৩০০ টি স্টিল নির্মিত বেড ফেলে রাখা হয়েছে। দীর্ঘদিন খোলা আকাশের নিচে পড়ে থাকায় রোদ, বৃষ্টি এবং ধূলোবালির প্রভাবে এসকল বেডে একদিকে যেমন মরিচা পড়তে শুরু করেছে অপরদিকে বেডগুলোকে ঘিরে তৈরি হয়েছে ঝোপঝাড়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও ওয়ার্কস দপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বশেমুরবিপ্রবি অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে ২০১৭ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত দু'বছরে এসকল বেড ক্রয় করা হয়েছে। এ সময়ে নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ড ও খুলনা শিপইয়ার্ড থেকে ১১ টি ওয়ার্ক অর্ডারের মাধ্যমে মোট ৪৪,৮২৭,৬২৫ টাকা মূল্যে ২৬৭০ টি হোস্টেল বেড ক্রয় করা হয়েছিলো এবং প্রতিটি বেডের গড় মূল্য প্রায় ১৬,৭৮৯ টাকা। এর মধ্যে শুধুমাত্র ২০১৯ এর ২৮ মে এবং ২৬ জুন দু'দিনেই ১৯৪৫ টি বেডের অর্ডার প্রদান করা হয়েছিলো। তবে এই সময়ে নতুনভাবে ৪০০ আসনবিশিষ্ট মাত্র দুটি হল নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া রেজিস্ট্রার দপ্তরের তথ্যানুযায়ী, ২০১৭ এর জানুয়ারি থেকে ২০১৯ এর জুলাই পর্যন্ত পূর্বনির্মিত হলগুলোর মধ্যে শুধুমাত্র স্বাধীনতা দিবস হল থেকে ২০টি বেডের চাহিদা জানানো হয়েছিল।
কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত বেড ক্রয় করায় এখন সরকারি টাকায় কেনা প্রায় ৮০০ বেড নষ্ট হচ্ছে যার আর্থিক মূল্য প্রায় ১৩,৪৩১,২০০ টাকা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মকর্তা দেশ সংবাদ কে বলেন, ‘নতুন নির্মিত হলগুলোর জন্য ১০০০-১৫০০টি বেড যথেষ্ট ছিলো। কিন্তু প্রয়োজনের অনেক বেশি সংখ্যক পণ্য অর্ডার করায় এগুলো এখন নষ্ট হচ্ছে।’
এসময় তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের এসকল পণ্য জনগণের ট্যাক্সের টাকায় কেনা হয় তাই অবশ্যই এই অর্থের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা উচিত।’
এ বিষয়ে ১৯৪৫ টি বেডের ওয়ার্ক অর্ডার প্রদানকারী প্রকল্প পরিচালক প্রফেসর ড. এম. এ. সাত্তার দেশ সংবাদ কে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তৎকালীন উপাচার্য প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের নির্দেশেই এসকল ওয়ার্ক অর্ডার প্রদান করেছিলাম। এমনকি পরবর্তীতে আমাকে ওয়ার্ক অর্ডারের জন্য অগ্রিম অর্থ প্রদানেরও নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু আমি অগ্রিম অর্থ প্রদান করতে রাজি হই নি এবং প্রকল্প পরিচালক পদ থেকে পদত্যাগ করি।’
আসবাবপত্র সংরক্ষণের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টোরের দায়িত্বে থাকা মোঃ সাইফুল্লাহ বলেন, ‘স্টোরের জায়গা বৃদ্ধির জন্য প্রশাসনকে গত দু’বছরে প্রায় পাঁচবার চিঠি প্রদান করেছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিছু ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, ইতিমধ্যে আমরা কাঠের বেঞ্চ, চেয়ার, টেবিলগুলো সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। তবে এখনও স্টোরের জায়গা পর্যাপ্ত নয়। স্টোরের জায়গা বৃদ্ধি পেলেেই অবশিষ্ট আসবাবপত্র সঠিকভাবে সংরক্ষণ সম্ভব হবে।’
পড়ে থাকা এসকল আসবাবপত্রের বিষয়ে বশেমুরবিপ্রবির সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত উপাচার্য ড. এ.কিউ.এম মাহবুব বলেন, ‘এগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোপার্টি, জনগণের প্রোপার্টি, দেশের প্রোপার্টি। এগুলো এভাবে নষ্ট হতে দেখে আমি অত্যন্ত মনঃক্ষুণ্ন। কিন্তু এ বিষয়ে আমি একা কোনো সিদ্ধান্ত নিবো না। রিজেন্ট বোর্ডের মিটিং এর মাধ্যমে এসকল আসবাবপত্রের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
দেশসংবাদ/প্রতিনিধি/এফএইচ/mmh
আপনার মতামত দিন
|