Published : Wednesday, 22 November, 2023 at 11:58 AM
বিশ্বের দেশগুলো গ্রিনহাউস গ্যাসের নিঃসরণ কমানোর যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তা মোটেই যথেষ্ট নয়, বরং এতে উষ্ণতাবৃদ্ধি কাঙ্ক্ষিত সীমারেখার অনেক বাইরে চলে যাবে। ফলে চলতি শতাব্দীর মধ্যেই পৃথিবীর তাপমাত্রা সম্ভবত বিপর্যয়করভাবে ২.৯ ডিগ্রি পর্যন্ত বাড়তে পারে। গত সোমবার এক প্রতিবেদনে এই উদ্বেগজনক তথ্য জানিয়েছে জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি (ইউএনইপি)।
দুবাইয়ে অনুষ্ঠেয় গুরুত্বপূর্ণ কপ২৮ জলবায়ু সম্মেলনের আগে ইউএনইপির বার্ষিক নিঃসরণবিষয়ক প্রতিবেদনটি সামনে এলো। এই প্রতিবেদনে উষ্ণতা রোধে প্রয়োজনীয় উদ্যোগের বিপরীতে দেশগুলোর অঙ্গীকারের মূল্যায়ন করা হয়েছে। এদিকে ইউরোপের জলবায়ু পর্যবেক্ষক সংস্থা কোপার্নিকাসও জানিয়েছে, এই
প্রথমবারের মতো বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রার পারদ প্রাক-শিল্পযুগের চেয়ে ২
ডিগ্রির ওপরে উঠেছে।
এ বছর মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি গরম অনুভূত হবে ধারণা করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে ইউএনইপি জানিয়েছে, বিশ্ব জলবায়ুর রেকর্ড ভাঙার ক্ষেত্রে সংখ্যা, গতি ও পরিমাপের একটি উদ্বেগজনক গতিবেগ প্রত্যক্ষ করছে। বিভিন্ন দেশের কার্বন নিঃসরণ কমানোর পরিকল্পনার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে ইউএনইপি সতর্ক করেছে, ২১০০ সালের মধ্যে বিশ্বের তাপমাত্রা ২.৫ থেকে ২.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধির পথে রয়েছে। শুধু বর্তমান নীতি ও নিঃসরণ কমানোর প্রচেষ্টার ভিত্তিতে বৈশ্বিক উষ্ণতা এমনকি ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বাড়তে পারে।
আগামী ৩০ নভেম্বর দুবাইয়ে কপ২৮ সম্মেলন বসছে। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এতে নাটকীয় ধরনের জলবায়ু পদক্ষেপের রূপরেখা প্রণয়নের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বিশ্বনেতারা আর এই সমস্যাকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারবেন না। এ সময় মহাসচিব নেতৃত্বের ব্যর্থতা, দুর্বলদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা এবং বিশাল সুযোগ হারানোর নিন্দা জানান। কপ২৮ সম্মেলনে তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য উল্লেখযোগ্য মাত্রায় দায়ী মিথেন গ্যাসের নিঃসরণ নিয়েও আলোচনা হতে পারে।
২০১৫ সালের আলোচিত প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলো বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি প্রাক-শিল্পযুগের চেয়ে ২ ডিগ্রি এবং সম্ভব হলে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখার ব্যাপারে একমত হয়। কিন্তু এ বছর এরই মধ্যে ৮০ দিনের বেশি গড় তাপমাত্রার পারদ ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে উঠেছে বলে ইউএনইপি জানিয়েছে।
২০৩০ সালের মধ্যে তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখার জন্য বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণ বর্তমানের চেয়ে ২৮ শতাংশ কম হতে হবে। আর তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উচ্চভিলাষী সীমায় রাখতে হলে বৈশ্বিক নিঃসরণ ৪২ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে।
বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা গত শুক্রবার প্রাক-শিল্পযুগের চেয়ে ২ ডিগ্রি বেশি ছিল। প্রথমবারের মতো বৈশ্বিক তাপমাত্রার পারদ এই রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছে বলে গত সোমবার ইউরোপের জলবায়ু পর্যবেক্ষক সংস্থা কোপার্নিকাস জানিয়েছে। পরের দিন শনিবারও তাপমাত্রার এই অভূতপূর্ব ধারা অব্যাহত ছিল বলে জানায় সংস্থাটি।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের জলবায়ু পরিষেবার (সিথ্রিএস) নতুন তথ্য অনুযায়ী, ১৭ নভেম্বর বৈশ্বিক তাপমাত্রা প্রাক-শিল্পযুগের চেয়ে ২.০৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি ছিল। সিথ্রিএসের উপপ্রধান সামান্থা বার্গেস এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে জানান, এই প্রথমবার বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১৮৫০-১৯০০ সালের চেয়ে ২ ডিগ্রির বেশি পরিলক্ষিত হয়েছে।