বগুড়ার ধুনট সদর ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ে চলছে দালালের বেপরোয়া দৌরাত্ম্য। দীর্ঘদিন ধরে দালালরা জমির নামজারি ও খাজনার জন্য আসা মানুষের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে ভূমি অফিসের কর্মচারীর মতোই কাজ করে আসছে। এলাকার সাধারণ কৃষক ও জমির মালিকরা দালালদেরই অফিসের কর্মচারী মনে করেন। অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীর চেয়ে তাদেরই বেশি চেনে মানুষ। ফলে তারা ওই সব কাজে সরাসরি দালালদের শরণাপন্ন হয়। ভূমি অফিসের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছত্রছায়ায় দালালরা এ কাজ গুলো করছেন।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ পেয়ে গ্রাহক সেজে ধুনট ইউনিয়ন ভূমি অফিসে গিয়ে দেখা যায়, ভূমি কর্মকর্তাদের মতো চেয়ার-টেবিল পেতে কাজ করছে এক ব্যক্তি (দালাল)। গুরুত্বপূর্ণ নথি, সরকারি আসবাবপত্র সবই তার হাতে। অফিসের নথিপত্র ঘাঁটাঘাঁটি করছেন। যেন তহশিলদারদের কোনো কাজই নেই। পাশের চেয়ারে আয়েসি ভঙ্গিতে বসে আছেন ভুমি কর্মকর্তা সানাউল হক।
পরিচয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার নাম আব্দুস ছাত্তার (৪০)। বাড়ি ধুনট সদরের জিঞ্জিরতলা গ্রামে। তিনি এখানে ৫ বছর ধরে কাজ করছেন। পারিশ্রমিক কত পান জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, কোনো পারিশ্রমিক নেন না। তবে প্রতিদিন উপরি কামাই যা হয় তা দিয়ে সংসার চালান। কোন অধিকারে অফিসের গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র ঘাঁটাঘাঁটি করছেন? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি চেঁচিয়ে উঠে বলেন, আমি স্থানীয় মানুষ। জনগণের সেবার জন্যই করি। আপনাকে কৈফিয়ত দেব কেন? এসময় সাংবাদিক পরিচয় দিতেই তিনি বলেন, আমার ভুল হয়েছে। কিছু মনে করবেন না।
ধুনট ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মর্কা সানাউল হক বলেন, দালালরা দীর্ঘদিন ধরে এখানে কাজ করছে। আমি হঠাৎ করে এসে তো তাদের তাড়িয়ে দিতে পারি না। তা ছাড়া তিনি এ এলাকার প্রভাবশালী। তার সঙ্গে দ্বন্দ্ব করলে আমার জীবনের নিরাপত্তা দেবে কে? তবে আমার এখানে সরকারি নিয়মেই সব কাজ হয়। এখানে জনগণের কোনো ভোগান্তি দেখতে পাবেন না। এছাড়া কোনো অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হয় না।
ভূমির নামজারি (নাম খারিজ) করতে আসা একাধিক ব্যক্তি জানায়, জমির নাম খারিজের জন্য ৬ থেকে ১০ হাজার টাকা নেওয়া হয়। প্রকৃত খরচ কত তা তারা জানে না। আর এ টাকা দালালদের হাতেই দেওয়া হয়। টাকা ছাড়া এ অফিসে কোন কাজ হয় না। আর দালের হাতে টাকা না দিলে হয়রানী ও লাঞ্ছিত হতে হয়।
ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সঞ্জয় কুমার মহন্ত বলেন, এমন অভিযোগের তদন্ত করে সত্যতা পাওয়ায় ধুনট ইউনিয়ন ভূমি অফিস থেকে আব্দুস ছাত্তার নামে এক দালালকে সরে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া অন্য দালালদের ভূমি অফিস ছেড়ে যাওয়ার জন্য সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।
দেশসংবাদ/প্রতিনিধি/আইশি