Published : Saturday, 13 February, 2021 at 11:43 PM, Update: 13.02.2021 11:46:34 PM
এ বি সিদ্দিক
মামা, আদর করে আপনার হৃদয়ের কোঠরে রাখবেন। দুঃখ কষ্টে আমার জীবন। বাস্তবতার সাথে লড়াই করে চলছি। কথায় বলে, “আমি ফুল কদম ডালে, ফুটেছি বর্ষাকালে। সারাটা জনম গেল আমার চোখেরই জলে”। আবার অনেকেই বলে, দুঃখে যাদের জীবন গড়া তাদের আবার দুঃখ কিসের? আপনার এই আশা ভরসা, আশীর্বাদ, দোয়া আর ভালোবাসা নিয়ে টিকে আছি। দীর্ঘদিন বাসায় বন্দি থাকার ফলে দাড়িগোঁফ আর চুলের যে অবস্থা, মনে হয় লালনের আখড়া থেকে বের হয়ে আসছি। করোনা সংক্রমণের ভয়ে নরসুন্দরের কাছে যাওয়া হয়নি। পরিবারের নিষেধাজ্ঞাও বাইরে না যাওয়ার একটি কারণ। সবাই আতংকিত। তারপরেও জীবন তো থেমে নেই। জীবন জীবিকার প্রয়োজনে মানুষকে ঘরের বাহিরে যেতে হচ্ছে। নন্দলালের মত একবারেই ঘরে বসে থাকলে হবে না। ওইদিন দেখলাম আমাদের পরিচিত এক ব্যবসায়ী তার চাকরীজীবি আমলা বউকে দিয়ে চুল দাড়ি কাটিয়ে আনন্দে দিশেহারা হয়ে বিজ্ঞানী আর্কিমিডিস এর মত ‘ইউরেকা’ ‘ইউরেকা’ বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তোলপাড় করে তুললেন। আসলে যে যেভাবে সুখ আর আনন্দ পায়। কথায় আছে, “পাগলের সুখ মনে মনে, দিনের বেলায় তারা গুণে”।
করোনা যেমন বৈশ্বিক পরিবর্তন এনেছে, অনুরূপ মানুষের অভ্যাসেও অনেক পরিবর্তন এনে দিয়েছে। পান দোকানদারের মত অনেক শিক্ষিত লোক পকেটে চিরুনি রেখেই যেনতেন জায়গায় এবং সময়ে অসময়ে চিরুনি ব্যবহার করত। আবার অফিসে বসের সামনে বসে অনেকে নাকে আঙ্গুল, চোখে-মুখে-কানে হাত, সাপের মত হঠাত হঠাত জিহ্বা বের করা- এইসব অভ্যাস আর দেখা যায়না। মেয়েদের পর্দায় বেশ পরিবর্তন এসেছে। যেন মুসলিম ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি ফিরে এসেছে। রক্তকরবীর মত মেয়েদের ঠোঁটে আর লিপস্টিক দেখা যায়না। কসমেটিক দোকানে এখন আর ভিড় নেই। রাস্তাঘাটে আগের মত ছেলে মেয়েদের আর বায়োলজি কেমেস্ট্রির গবেষণা নেই। মরুভূমির উটপাখি ডানা থাকার পরেও ডানা ব্যবহার না করার কারণে এখন উড়তে পারে না। সাপেরও একসময় পা ছিল। গর্তে ঢুকতে ঢুকতে তা বিলীন হয়ে গেছে। আগামী দিনে মানুষের কি পরিবর্তন আসবে বা আসছে তা বলা কঠিন।
মামা, করোনায় আক্রান্তের তুলনায় চিকিৎসকের মৃত্যুহার বেশি। এটা একটা অশনি সংকেত ও আতঙ্কের বিষয়। বিএমএর হিসেব অনুযায়ী, এ পর্যন্ত ১৮৪৬ জন ডাক্তার করোনায় আক্রান্ত। করোনায় (উপসর্গ সহ) মারা গেছেন ৬৪ জন। ডাক্তারদের মৃত্যুহার ৩.৫%। এছাড়া ১৪৪৯ জন নার্স, ২০৩৮জন স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত। এ পর্যন্ত সর্বমোট আক্রান্ত ১,৮১,১২৯ জন (প্রথম আলো,১২ জুলাই)। মৃত্যু ২৩০৫ জন। মৃত্যুহার ১.২৭%। তারপরও মানুষ থেমে নেই। জীবন জীবিকার সংগ্রামে সদা ব্যস্ত। শুধু করোনাকে ভয় বা জয় না, শুধুমাত্র বেঁচে থাকার লড়াই। গবেষণায় দেখা যায়, পৃথিবীতে ৭০০ রকম ভাইরাস রয়েছে। প্রতি ৪ মাস অন্তর একটি ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা যায়।
মামা, করোনাকে আমরা করো না বলতে পারি। কিন্তু আধুনিক সভ্যসমাজে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সত্যকে সত্য, সাদাকে সাদা বলতে পারছি না। সত্যবাবু মারা গেছেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের আজীবন সদস্য, দেশবরেণ্য সাংবাদিক ফয়েজ আহমদ এই নামে বই লিখে গিয়েছেন অনেক বছর আগে। কবি সাহিত্যিক, সাংবাদিক পূর্বানুমান করতে পারেন। আমরা মিথ্যার ফুলঝুড়ির সদাই করছি। প্রবীণ সাংবাদিক (ENA) হিন্দুস্থান টাইমসের বাংলাদেশ প্রতিনিধি (সাবেক) জয়নাল আবেদিন দুঃখ করে বলতেন, “দেশের ভবিষ্যৎ খারাপ। মিথ্যার উপর দেশ কতদিন টিকে থাকবে। যে যেখানে আছে সেখান থেকেই লুটপাট করছে। এ দেশে থাকা ঠিক হবেনা”। কথাগুলো ১০/১২ বছর আগে বলেছিলেন। তিনি অনেক আগেই আমেরিকায় চলে গেছেন। আমার এই উকিল শ্বশুরের কথাগুলোর সাথে বর্তমান বাস্তবতার অনেক মিল রয়েছে। যে যেখানে আছে, শুধু নিজকে নিয়ে ব্যস্ত। দেশপ্রেমের বড়ই অভাব। সেতু মামা এই বিষয়ে একটি গল্প বললেন।
এক ল্যাংড়া হুজুর তার ইমামতিতে সূরা পাঠ করতে গিয়ে বললেন, “ওয়ামা কানা মিনাল কাফিরিন”। নামাজের পিছনে থাকা এক কানা হুজুর শুনে খুব মাইন্ড করলেন এবং ক্ষোভ প্রকাশ করলেন। পরবর্তী নামাজে কানা হুজুর ইমামতির সুযোগ নিয়ে বললেন, “ওয়া ল্যাংড়া মিনাল ফাসিকিন”। অর্থাৎ কানাকে কানা, ল্যাংড়াকে ল্যাংড়া বলা যায়না। নিজেদের সুরক্ষা সামগ্রীর ব্যাপারে বলতে গিয়ে অনেক ডাক্তার বদলি এবং চাকরিচ্যুত। বিচারপতি দেশান্তর। সাংবাদিক, শিক্ষক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে জেলখানায়। এই আইনে কোন পরোয়ানা ছাড়াই গ্রেফতার করা যায়। যার ২০ টি ধারার মধ্যে ১৪ টি ধারাই অজামিনযোগ্য। সম্পাদক পরিষদসহ সকল মহল থেকে এই আইন বাতিলের দাবি উঠেছে। তারপরও আমাদের বোকার মত প্রশংসা আর দায়িত্বজ্ঞানহীন সমালোচনার শেষ নাই।
আপনি তো মামা সময়ের সাহসী সন্তান। সংগ্রামী জীবনের এক কালজয়ী ইতিহাস। কিন্তু আমরা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে চাই না বা পারি না। ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না। ২৩ শে জুন ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের মধ্য দিয়ে অস্তমিত হয় স্বাধীন বাংলার শেষ সূর্য। প্রাসাদ ষড়যন্ত্রই এই পরাজয়ের মূল কারণ। ইতিহাসের খলনায়ক লর্ড ক্লাইভকে একদিন আত্মহত্যা করতে হয়েছে। কবরের কোন নিশানা নেই। ওইদিন বৃটেনে তার দেশের লোকেরা তার মূর্তিটাও ভেঙ্গে ফেলল। মীর জাফর মারা গেল কুষ্ঠরোগে। মুর্শিদাবাদে তার বাড়িটি নিমকহারামের দেউড়ি নামে পরিচিত। ঘৃণিত ও প্রাসাদ ষড়যন্ত্রকারী রায়দুর্লভ, জগতশেঠ, উমিচাঁদ আর ঘষেটি বেগমদের স্থান ইতিহাসের আস্তাকুড়ে। তাদের মৃত্যু হয়েছিল নির্মমভাবে। বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণই হল ইতিহাস। আসলে অত্যাচারী ব্যক্তি বা শাসককে তার অপকীর্তির জন্য শাস্তি ভোগ করতেই হয়। একদিন আগে অথবা একদিন পরে। এরশাদ শিকদার, বাংলাভাইদের ইতিহাস এবং তাদের শেষ পরিণতি আমাদের সবার জানা।
মামা, ফরিদপুরের কানাইপুরের বিসিক শিল্পনগরীতে পার্থ জুটমিল। মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাপস কুমার পাল পুঁজির অভাবে মিলটি সচল রাখতে পারছেন না। ইসলামী ব্যাংকের অর্থায়নে থাকা মিলটি এখন বন্ধের পথে। ব্যাংক ঋণ ও দায়দেনা ১৩ কোটি টাকায় এসে দাঁড়িয়েছে। পাওনাদার ও শ্রমিকদের কথা চিন্তা করে ভাল বিনিয়োগকারী এবং অর্থ মন্ত্রণালয় ও ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের কাছে বারবার ধরনা দিচ্ছেন। ভাল বিনিয়োগকারীর কাছে মিলটি হস্তান্তর করার জন্য ফেনীর নুর মোহাম্মদ আমাকে তদবির করার জন্য অনুরোধ করেন। এদিকে সরকার শ্রমিকদের বাড়তি মজুরির অজুহাত দেখিয়ে বিশ্ববাজারে পাট ও পাটজাত পণ্যের চাহিদা থাকার পরেও ২৬টি পাটকল বন্ধের ঘোষণা দেন। এর ফলে কারখানার শ্রমিক, পাট ও পাটজাত ব্যবসার সাথে জড়িত লক্ষাধিক লোক কর্মহীন হয়ে পড়ল।
১৯৭২ সালের ২৬ শে মার্চ রাষ্ট্রপতির আদেশে ব্যক্তি মালিকানাধীন, পরিত্যাক্ত ও সাবেক ইস্ট পাকিস্তান ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের ৭৮টি পাটকল নিয়ে বিজেএমসি গঠিত হয়। ১৯৮১ সালে ৮২টি পাটকল বিজেএমসির আওতায় আসে। অনবরত দুর্নীতি, কর্মচারীদের অদক্ষতা, মাথাভারি প্রশাসন, অব্যবস্থাপনা, নীতি সহায়তার অভাব ও আধুনিকায়নের অভাবে পাটকলগুলো লোকসানের সম্মুখীন হয়েছে। অথচ ৪৪ বছরে ঋণখেলাপীরা ৪৫ হাজার কোটি টাকা মেরে দিয়েছে। সরকার এই ঋণ মাফ করে দিয়েছে। ২৬টি পাটকল আধুনিকায়ন করতে ১০ হাজার ২০০ কোটি টাকা প্রয়োজন। এতে তিনগুণ পর্যন্ত উৎপাদন বৃদ্ধি করা যেত বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। পরিবেশ দূষণের কারণে বিশ্ববাজারে পাটের চাহিদা বেড়েছে।
দেশে প্রতিবছরে ১০ লাখ ৫০ হাজার টন পাট উৎপাদন হয়। দেশের ১ লাখ ৫০ হাজার টন পাটের চাহিদা মিটিয়ে অবশিষ্ট ৯ লাখ টন পাট বিদেশে রপ্তানি করা হয়। ভারতেও নতুন পাটকল গড়ে উঠেছে। বিজ্ঞানী মরহুম মাকসুদুল আলম নতুন জাতের পাটের আবিষ্কার এবং পাটের ক্ষতিকর ছত্রাকের জীবন রহস্য আবিষ্কার করে পাটের বাজারে নতুন আশার আলো সঞ্চার করেছিলেন। সরকার এই আবিষ্কারের বাহবা নেওয়ার জন্য অনেক ঢাকঢোল পিটিয়েছিলেন। সকল আশা নিষ্ফল। কারণ গরিবের পেটে ঘি হজম হয় না। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে শাটল ট্রেনে যাওয়ার পথে আমিন জুটমিল চোখে পড়ত। সাথে আমিন টেক্সটাইল মিলও ছিল। অনুমতি নিয়ে আমরা কয়েকজন ছাত্র কারখানা পরিদর্শনে যাই। ভাগ্যক্রমে শ্রমিকনেতা আবুল বাশারকেও পাই। নেতা মিলের সার্বিক অবস্থা এবং শ্রমিকদের দাবিদাওয়া অবহিত করেন। ভিতরে গিয়ে শ্রমিকদের ঘাম ঝরানো পরিশ্রম ও মাক্কুমারার দৃশ্য দেখি।
এরশাদ সরকারের আমলে ৩৫টি পাটকল ব্যক্তি মালকানায় ছেড়ে দেওয়া হয়। এই সময় ১৯৮৪ সালে সরকার মিলের লাভ লোকসান সম্পদ-দায় জানার জন্য অডিটর নিয়োগ দেন। নাসির মোহাম্মদ এন্ড কোং(চাটার্ড একাউন্টেন্ট ফার্ম)এর নিয়োগপ্রাপ্তির মাধ্যমে একজন প্রতিনিধি হিসেবে আমি অডিট করার সুযোগ পাই। চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে অবস্থিত ভিক্টোরিয়া জুট প্রোডাক্টস লিমিটেড এর মালিকানা নেয় ইস্পাহানী গ্রুপ অব কোম্পানি। এই মিলে অডিট করতে গিয়ে অপচয়, অব্যবস্থাপনা, পাটক্রয়ে সীমাহীন দুর্নীতির চিত্র আমাদের নজরে আসে। শ্রমিকনেতাদের দৌরাত্ম, বিজেএমসির দায়িত্বহীনতা আর শ্রমিকদের নিরলস পরিশ্রমের দৃশ্য দেখে অশ্র সংবরণ করতে পারিনি।
মামা, পুলিশের মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ দেশের জঙ্গি দমনে প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেছেন। হেফাজত ইসলামীর আন্দোলন দমনে সরকারের আস্থা অর্জন করেছেন। মাওলানা আল্লামা শফি (তেঁতুল হুজুর)কে একবারে শীতল পাটিতে শোওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। এই হেফাজত পার্টিকে ভালোভাবে হেফাজত করে কাফনের কাপড়সহ মাদ্রাসায় পাঠিয়ে দিয়েছেন। ওইদিন রাজারবাগ বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়ামে বিশেষ অপরাধ ও আইন শৃঙ্খলা সংক্রান্ত সভায় করোনাকালে পুলিশের ভূমিকার প্রশংসা করেন আইজি সাহেব। মহামারীর তিন মাসে তথাকথিত বন্দুকযুদ্ধ বা ক্রসফায়ারে পুলিশ ৬৭ জনকে হত্যা করেছে (প্রথম আলো, ১৬ই জুন)। এই বিষয়টি পুলিশের অর্জিত গৌরবকে ম্লান করে দিয়েছে। সরকার মানুষ মারার এই ছাড়পত্র পুলিশকে দিয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক।
মামা, রাজধানীর মিরপুরের শহীদ পুলিশ স্মৃতি কলেজ-এর ফলাফল প্রথম সারিতে। কিন্তু এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতির যেই পান্ডুলিপি দেখলাম তা হল ষাট হাজার শ্লোকে লিখিত কাব্যগ্রন্থ শাহনামা কন্ঠহার এর মতই। এই প্রতিষ্ঠানের সীমাহীন দুর্নীতি তথ্য উপাত্তসহ তদন্তে প্রমাণিত এবং বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকার অনুসন্ধানমূলক রিপোর্ট হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে। মজার ব্যাপার হলো, অবৈধভাবে পরিচালক পদ সৃষ্টি করে এডিশনাল ডিআইজি হিসেবে অবঃ সৈয়দ মনিরুল ইসলাম (যার বয়স ৭৫ বছর ৬ মাস) তিনবার ফেয়ারওয়েল দেখিয়ে ১ কোটি ১০ লাখ টাকা (পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্ত অমান্য করে) তার ব্যাংক হিসাবে জমা করেন। তিনি তার পুত্রবধূ (গভর্নিং বডির সদস্য), সিনিয়র হিসাবরক্ষণ ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা এস এম নাজমুছ ছাকিব, একাডেমিক অফিসার এস এম আব্দুল মান্নানসহ একটি সিন্ডিকেট তৈরি করে বিভিন্ন খাত থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। এই চক্রের প্রত্যেকের ব্যাংক হিসাবে কোটি কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেনের প্রমাণ পাওয়া যায়। এবং তারা স্বনামে বেনামে ঢাকা শহরে প্রচুর ধন সম্পদের মালিক হয়েছেন।
বাংলাদেশ পুলিশ প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত রাজধানীর এই ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৯৫০০ ছাত্র ছাত্রী ও ১৩০ জনের অধিক মেধাবী শিক্ষক রয়েছেন। শিক্ষকদের বর্তমান অবস্থান মানবতা বিবর্জিত জেলখানার কয়েদিদের মত। অস্তিত্বের লড়াই করে মানসিক যন্ত্রণা নিয়ে চাকরিতে টিকে আছেন। প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে অনেক শিক্ষক চাকরিচ্যুত আবার অনেকেই মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। পুলিশ প্রশাসনের নাকের ডগার উপর দিয়ে এই ধরনের দুর্নীতি এবং দুর্নীতিবাজদের বহাল তবিয়তে থাকার নজির আর কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নাই বলে আমার জানা। বিষয়টি দেশ ও জাতির জন্য খুবই লজ্জাজনক।
মামা, আমাদের সকলের প্রিয় সাইফুদ্দিন ওরফে ভেজাল মামা টেলিফোনে করোনাকালে তার সংসারের নয় নাম্বার বিপদ সংকেতের কথা জানাল। মামী রাগে ক্ষোভে বিষবাষ্প আর জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরি ভিসুভিয়াস হয়ে আছেন। মামা তালপাতার সেপাই যার বাতাসযুদ্ধে জয়ের আশা ক্ষীণ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮২ ব্যাচের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের আমাদের সহপাঠী। উঠাবসা আমাদের সাথে। মিষ্টিভাষী, সদালাপী। সংসার জীবনে আর বন্ধুমহলে তার ভেজাল কর্মকান্ডের অন্ত নেই। মামা ১/১১ এর সময় ক্ষমতাধর ব্যক্তি ছিলেন। বর্তমানেও বেশ ক্ষমতাধর। মামী অশ্রুসজল নয়নে তার অভিব্যাক্তি প্রকাশ করলেন এবং বললেন, “তোমার মামা একটা বালিশ ব্যবহারের পরিবর্তে নিজে একা তিনটা বালিশ মাথার নিচে দিয়ে রাত্রিযাপন করছেন”।
মামা যে অবসরে আছেন তা সরাসরি না বলে সংসারে ভেজাল লাগিয়ে রাখছেন। এই বিষয়ে একটা গল্প মনে পড়ে যায়। গ্রামের এক ভেজাল লোক নানাভাবে মানুষকে কষ্ট দিত ও মানুষের মধ্যে ভেজাল সৃষ্টি করে রাখত। লোকজন অতিষ্ঠ। এই লোক মৃত্যুর আগ মুহূর্তে ছেলেমেয়েদের ডেকে বলল, “আমি তো লোকজনকে কষ্ট দিয়েছি। আমার শাস্তি হিসেবে আমাকে দাফন না করে গ্রামের মাঝখানে দুটো বাঁশের খুঁটির উপর লাশটি টাঙ্গিয়ে রাখবে”। যেই কথা সেই কাজ। মৃত্যুর পর তার ছেলেমেয়েরা রাতের মধ্যেই বাঁশের খুঁটির মধ্যে লাশটি টাঙ্গিয়ে রাখল। পরদিন ভোরে জানাজানি হওয়ার পর পুলিশ এসে ঘিরে ফেলল। গ্রামের লোকজনকে পিটিয়ে রশি দিয়ে বেঁধে থানায় নিয়ে গেল। গ্রামের লোকজন বলাবলি করছে, মৃত্যুর পরেও লোকটি ভেজাল করে আমাদের কষ্ট দিয়ে গেল।
উপদেষ্টা সম্পাদক ব্রি. জে. (অব.) আবদুস সবুর মিঞা এনামুল হক ভূঁইয়া ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : এম. এ হান্নান যুগ্ম-সম্পাদক মোহাম্মদ রুবাইয়াত আনোয়ার মেবিন হাসান