শিরোনাম: |
শিগগিরই নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা
দেশসংবাদ, ঢাকা :
|
বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থনীতিবিদরা বলছেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে অগ্রাধিকার দিয়ে মুদ্রা ও ঋণ সরবরাহে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি প্রয়োজন। দেশের অর্থনৈতিক প্রবাহ, ব্যবসা-বাণিজ্যের অগ্রগতি ও সহায়ক মুদ্রানীতি আসতে হবে। এক্ষেত্রে বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় গতানুগতিক নিয়মে না গিয়ে গুণগত দিক বেশি নজর দিতে হবে। একই সঙ্গে নির্বাচনী বছরে অর্থ পাঁচার ও অবৈধ লেনদেন ঠেকাতে আগ্রাসী বিনিয়োগ বন্ধ করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদারকি বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন তারা। অর্থনীতিবিদ এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনী বছরে বেসরকারি খাতে ঋণ বেড়ে যায়। ইতোমধ্যে গত কয়েক মাস ধরে ঋণ প্রবাহ বাড়ছে। গত মুদ্রানীতিতে জুন পর্যন্ত ঋণের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তার চেয়ে বেশি বিতরণ হয়েছে। এটা মূলত নির্বাচন কেন্দ্রিক হতে পারে। নির্বাচনী খরচের জন্য আগে থেকেই ঋণ করে রাখছে। আর কিছু অর্থ পাঁচার হচ্ছে। ঋণের এ প্রবাহ নির্বাচনের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত অব্যাবহ থাকবে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতিতে জুন পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ ধরা হয়েছিল ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ। যা প্রথমার্ধে ছিল ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ। এছাড়া মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৬ শতাংশ। আগে ছিল ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। আর মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৪ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়। যার বেশিরভাগই বাস্তবায়ন হয়নি। সংশ্লিষ্টরা জানায়, চলতি বছরে জাতীয় নির্বাচনের কারণে কালো টাকার প্রবাহ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে বাজারে নগদ অর্থের প্রবাহে লাগাম টানার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল গত অর্থবছরের (জানুয়ারি-জুন) দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতিতে। এছাড়া ঋণ প্রবৃদ্ধি মাত্রারিক্ত বাড়ার কারণে ঋণের লাগাম টেনেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ঋণ আমানত অনুপাত হার কমিয়ে দেয়া হয়েছিল। তবে ব্যাংকগুলোর চাওয়াও নতুন এ হার কার্যকরের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, মুদ্রানীতির প্রধান চ্যালেঞ্জ বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ নির্ধারণ করা। কারণ, এখন তারল্য সঙ্কট রয়েছে। আবার ব্যাংকগুলো সুদহার কমানোর ঘোষণা দিয়েছে। অন্যদিকে মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমূখী রয়েছে, বিশেষ করে খাদ্রপণ্যের মূল্যস্ফীতি। আমদানি বেড়েছে সেই হারে বাড়েনি রফতানি। রেমিট্যান্সের ওপর চাপ বেড়েই চলেছে। বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে অস্থির। এছাড়া আগামীতে ব্যাংক থেকে সরকার ঋণও নেবে। সব মিলিয়ে সামনে যে মুদ্রানীতি আসবে তা বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জই হবে। দেশের অর্থনৈতিক প্রবাহ, ব্যবসা বাণিজ্যের অগ্রগতি ও সহায়ক মুদ্রানীতি ঘোষণার পরামর্শ দিয়ে সাবেক এ গভর্নর বলেন, গুণগত দিক বেশি নজর দিতে হবে। নিয়ম অনুযায়ী শুধু লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ না করে বাস্তবমুখী সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, বেসরকারি ঋণ কোন কোন খাতে যাচ্ছে এটি নিশ্চিত করতে হবে। এটি কি শুধু আমদানি আর সেবা খাতে চলে যাচ্ছে, না কোথায় যাচ্ছে তা দেখতে হবে। এক সঙ্গে বেসরকারি ঋণ উৎপাদনশীল ও এসএমই খাতে যেন যায় তা নিশ্চিত করতে হবে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জনের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতি বছর দুইবার মুদ্রানীতি প্রণয়ন ও প্রকাশ করে। ছয় মাস অন্তর এ মুদ্রানীতি প্রকাশ হয় একটি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে অর্থাৎ জুলাইয়ে এবং জানুয়ারিতে। দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় মুদ্রানীতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে পরবর্তী ছয় মাসে অভ্যন্তরীণ ঋণ, মুদ্রা সরবরাহ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ, বৈদেশিক সম্পদ কতটুকু বাড়বে বা কমবে এর একটি পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়। দেশসংবাদ/এসআই |
আপনার মতামত দিন
|