শিরোনাম: |
যশোরের মণিরামপুরে আমন সংগ্রহের তালিকায় ভুয়া নামের ছড়াছড়ি!
আব্দুর রহিম রানা, যশোর
|
যশোরের মণিরামপুরে আমন সংগ্রহের তালিকায় ভুয়া নামের ছড়াছড়ি! লটারির মাধ্যমে নির্ধারিত তালিকার বিষয়টি যথাযথভাবে প্রচার করা হয়নি বলে অভিযোগ। ফলে তালিকায় স্থান পাওয়া অনেক কৃষকই বিষয়টি জানেন না। এদিকে নির্বাচিত কৃষকের তালিকায় অনেক ভুয়া নাম স্থান পেয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রকৃত আমন চাষিদের তালিকা প্রস্তুতে কৃষি অফিসের চরম অবহেলা ছিল বলেঅভিযোগ রয়েছে। ধান ক্রয়ের লক্ষে কৃষি উপকরণ সহায়ক কার্ডধারী চলতি মৌসুমে আমন চাষিদের তালিকা প্রস্তুত করার কথা থাকলেও তা মানা হয়নি বলে অভিযোগ কৃষকদের। রোববার সরেজমিন উপজেলার রোহিতা ও খোদাপাড়া ইউনিয়নের স্মরণপুর, পট্টি, বাগডোব, নওয়াপাড়া, মাহমুদকাটি গ্রাম ঘুরে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। এমনকি তাদের মাঠে কোন ধানের জমিও নেই। ইউনিয়নের তালিকার ১২৩ ও ১৬২ নম্বরের নাম দুই যথাক্রমে জলকর রোহিতা গ্রামের সাধন বিশ্বাস ও তরিকুল ইসলামের। এদের মধ্যে সাধন বিশ্বাস গত এক বছর ধরে কেশবপুর উপজেলার স্থায়ী বাসিন্দা। আর তরিকুল ইসলাম রিকসা চালক। তরিকুলের মাঠে কোন জমি নেই, নেই কৃষি কার্ডও। খেদাপাড়া ইউনিয়নের তালিকার ৬৮ ও ৮৯ নম্বরের আলমগীর হোসেন এবং আমিনুল্লাহ মাহমুদকাটি গ্রামের বাসিন্দা। আলমগীর ইট ভাটার শ্রমিক। তার মাঠে কোন জমি নেই। হেলাঞ্চি গ্রামে শ্বশুরবাড়ি এলাকায় মাত্র ৫ শতক জমিতে আমন চাষ করেছে সে। নেই কৃষি কার্ড তার। আর আমিনুল্লাহ বৃদ্ধর বয়স ৮০-৮৫ বছর। আমিনুল্লার কৃষি কার্ড নেই। নিজের এক বিঘা ধানের জমি থাকলেও সেটা বর্গা দিয়ে ৬-৭ মণ আমন ধান পেয়েছেন তিনি। উল্লেখিত সবার নামে এক মেট্রিকটন ধান বরাদ্দ হয়েছে। যদিও ধান বরাদ্দের বিষয়ে তারা কিছুই জানেন না। জাহানারা, আছিয়া, সাধন, তরিকুল, আলমগীর বা আমিনুল্লাহ নয়। লটারির মাধ্যমে ধান ক্রয় তালিকার দুই হাজার ১৫০ জনের মধ্যে এমন অনেক নামই রয়েছে, যাদের কোন কৃষি কার্ড নেই এবং তারা আমন চাষও করেননি। তালিকায় এমন ভুয়া নাম দেখে হতবাক ও হতাশ প্রকৃত আমন চাষিরা। এই তালিকা নিয়ে ক্ষুব্ধ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও। মাহমুদকাটি গ্রামের নুর আলম বলেন, আমি সাড়ে তিন বিঘা জমিতে আমন চাষ করিছি। কৃষিকার্ডসহ সব কাগজপত্র চাওয়া মাত্র জমা দিছি। আমার নাম তালিকায় নেই অথচ যারা এক শতকও ধান করিনি তাদের নাম রয়েছে। ওই গ্রামের নাজিম উদ্দিন বলেন, আমি সাত বিঘা জমিতে আমন চাষ করেছি। কেউ আমার কাছে কখনও কাগজপত্র চাইনি। খেদাপাড়া ইউপির সাত নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য তায়জুল ইসলাম মিলন বলেন, আমার ওয়ার্ডে কখন, কারা এই তালিকা করেছে কিছুই জানি না। তালিকা তৈরির সময় সংশ্লিষ্ট কৃষি অফিসার আমার সাথে যোগাযোগ করলে কোন ভুয়া নাম আসত না। এদিকে তালিকায় স্থান পাওয়া অনেক কৃষকেরই গোলায় ধান নেই বলে জানা গেছে। হালখাতা সামলানো ও বোরো চাষের প্রস্তুতি নিতে তারা ধান বিক্রি করে ফেলেছেন। জলকর রোহিতা গ্রামের আবুল খায়ের বলেন, ৪-৫ বিঘা জমিতে আমন চাষ করেছি। যা ধান পেয়েছি সব বিক্রি করে দিয়েছি। এখন ঘরে ৫-৬ মণ ধান আছে। আমার নাম তালিকায় আছে কিনা তাও আমি জানি না। ওই গ্রামের মহসিন বলেন, আমার স্ত্রী রাবেয়ার নামে এক মে.টন ধান বরাদ্দের বিষয়ে আমরা জানি না। তালিকার এসব ভুয়া নামধারীদের এবং যাদের তালিকা আছে কিন্তু গোলায় ধান নেই তাদের প্রত্যেককে এক হাজার টাকা করে দিয়ে অন্য লোকে ধান দেবেন বলে বিভিন্ন এলাকায় গুঞ্জন চলছে। ফলে এবারও সিন্ডিকেটের মাধ্যমে গুদাম কর্তৃপক্ষ ধান ক্রয় করে সরকারের মহৎ উদ্দেশ্যকে ব্যহত করতে চলেছেন বলে অভিযোগ। মণিরামপুর খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান মুন্না বলেন, এই পর্যন্ত পাঁচ মেট্রিকটন ধান সংগ্রহ করা হয়েছে। আদ্রতা বেশি থাকায় ধান সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে না। যদিও পাশের কেশবপুর উপজেলায় ১০০ মে.টনের উপরে ধান সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। মণিরামপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মামুন হোসেন খান বলেন, তালিকা প্রস্তুত করেছে কৃষি অফিস। তালিকায় ভুয়া নাম থাকলে দায় তাদের। তবে, কৃষি কার্ড বাদে কোন ধান সংগ্রহ করা হবে না। তালিকার ভুয়া নামের ব্যাপারে জানতে চাইলে, সংশ্লিষ্ট এলাকার উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা বিল্লাল হোসেন ও তুহিন বিশ্বাস তালিকা প্রস্তুতে নিজেদের দুর্বলতার কথা স্বীকার করেছেন। আর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হীরক কুমার সরকার বলছেন, কৃষি কার্ড ও আমন চাষি বাদে কোন তালিকা হয়নি। যারা কৃষি কার্ড নেই বলছে, হয়ত তারা কার্ড হারিয়ে ফেলেছে। তবে অভিযোগের বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন বলে জানিয়েছেন। ধান ক্রয় কমিটির সভাপতি ইউএনও আহসান উল্লাহ শরিফী আমাদের প্রতিবেদক আব্দুর রহিম রানাকে বলেন, ধান ক্রয়ের ধীর গতি নিয়ে আমি খাদ্য নিয়ন্ত্রকের সাথে কথা বলেছি। দ্রুত ক্রয় কাজ চালাতে তাকে বলা হয়েছে। তালিকায় ভুয়া নাম থাকলে কৃষি কর্মকর্তা ও খাদ্য নিয়ন্ত্রকের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। চলতি মৌসুমে মণিরামপুরে দুই হাজার ৪৭৪ মেট্রিকটন আমন সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এক হাজার ৪০ টাকা মণ দরে দুই হাজার ১৫০ জন কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয়ের জন্য লটারির মাধ্যমে তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে এই ক্রয় কাজ। দেশসংবাদ/প্রতিনিধি/এসকে |
আপনার মতামত দিন
|