ভারতীয় বহুজাতিক কোম্পানি আদানির বাংলাদেশে সরবরাহকৃত বিদ্যুতের বকেয়া বিল আংশিক পরিশোধের ব্যাপারে তারা ইতোমধ্যেই প্রক্রিয়া শুরু করেছে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ বিভাগ।
সোমবার (৪ নভেম্বর) সরকারের দুইজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বারত দিয়ে এ তথ্য জানায় বিট্রিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। তবে এই কর্মকর্তাদের নাম প্রতিবেদনে প্রকাশ করেনি বিবিসি।
এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেন, আমরা ইতোমধ্যেই আদানি গ্রুপ বরাবর ১৭ কোটি ডলারের এলসি ইস্যু করেছি।
বিবিসি আরও জানায়, বকেয়া ৮০ কোটি ডলার পরিশোধ না করা হলে আগামী ৭ নভেম্বর থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হবে বলে হুমকি দিয়েছে আদানি গ্রুপ।
অপরদিকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়ার ব্যাপারে আলটিমেটাম প্রসঙ্গে বিবিসির পক্ষ থেকে আদানি গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা কোনো সাড়া দেয়নি বলে জানানো হয় প্রতিবেদনে।
অপরদিকে বাংলাদেশি কর্মকর্তারা বিবিসিকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশ পর্যায়ক্রমে এই পাওনা নিয়মিতভাবে পরিশোধ করবে। পাশাপাশি এই সংকট খুব দ্রুত সমাধান হওয়ারও প্রত্যাশা করেন তারা।
এর আগে বিদ্যুৎ বাবদ পাওনা পরিশোধের জন্য বাংলাদেশকে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে আদানি গ্রুপ, ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমে এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশিত হয়।
তবে বাংলাদেশের তরফে এ ব্যাপারে শক্ত প্রতিক্রিয়া জানানো হলে সুর নরম করে আদানি গ্রুপ। পাশাপাশি বিদ্যুৎ বাবদ পাওনা পরিশোধের জন্য বাংলাদেশকে সময় বেঁধে দেয়ার আলটিমেটামের বিষয়টি অস্বীকার করে আদানি গ্রুপ। তারা জানায়, ৮৫ কোটি ডলার বকেয়ার পুরোটা তারা ৭ নভেম্বরের মধ্যে চায়নি। রোববার এ সংক্রান্ত বিবৃতিতে আদানি গ্রুপ জানায়, আদানি সাত দিনের মধ্যে ৮৫০ মিলিয়ন ডলারের পূর্ণ পেমেন্ট দাবি করেনি। বিষয়টির সমাধানে আদানি বাংলাদেশের পিডিবির সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতা করছে।
এর আগে রোববার ভারতের টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়, ৭ নভেম্বরের মধ্যে ৮৫০ মিলিয়ন ডলার বকেয়া পরিশোধ না করা হলে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করবে আদানি পাওয়ার।
ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ৩১ অক্টোবর বকেয়া পরিশোধের নির্ধারিত সময়সীমা পার হওয়ার পর বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে ১৭০ মিলিয়ন ডলারের ঋণপত্র খোলার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু বিপিডিবি বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তিতে উল্লিখিত এ শর্ত পূরণ করেনি বলে অভিযোগ করেছে আদানি পাওয়ার। তবে এর প্রতিক্রিয়ায় আদানি পাওয়ার ঝাড়খন্ড ৩১ অক্টোবর থেকে তাদের বিদ্যুৎ সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। যাতে বাংলাদেশে বিদ্যুতের ঘাটতি বৃদ্ধি পেয়েছে।
সেখানে আরও বলা হয়, ঝাড়খন্ডে আদানির গোড্ডা প্ল্যান্টে গত শুক্রবার উৎপাদিত এক ১,৪৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুতের মধ্যে বাংলাদেশে মাত্র ৭২৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে। ওই প্ল্যান্টটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ সরবরাহকারী। এছাড়া পায়রা, রামপাল ও এসএস পাওয়ার ওয়ানসহ অন্যান্য বড় কারখানাগুলোতেও জ্বালানি সংকটের কারণে উৎপাদন কমে গেছে।
ডলার সংকটের কারণে সময়মতো অর্থ পরিশোধে বাংলাদেশ হিমশিম খাচ্ছে বলেও উল্লেখ করা হয় টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে।