রীতিমতো ইতিহাস গড়ে দ্বিতীয়বারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ব্যবসায়ী থেকে রাজনীতিক ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগামী ২০ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেবেন তিনি। তার আগে মন্ত্রিসভা গঠন করতে হবে তাকে। কারা থাকবেন তার নতুন মন্ত্রিসভায়? প্রতিরক্ষা, গোয়েন্দা, পররাষ্ট্র, বাণিজ্য, অর্থনীতি, অভিবাসনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দেখভালের জন্য ট্রাম্পের পছন্দের সম্ভাব্য তালিকায় কোন কোন ব্যক্তি স্থান পেতে পারেন, তার সম্ভাব্য তালিকাটি প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
স্কট বেসেন্ট, সম্ভাব্য অর্থমন্ত্রী
ট্রাম্পের একজন গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক উপদেষ্টা স্কট বেসেন্ট। তাকে অর্থমন্ত্রী (ট্রেজারি সেক্রেটারি) হিসেবে বেছে নিতে পারেন ট্রাম্প। দীর্ঘদিনের হেজ ফান্ড বিনিয়োগকারী বেসেন্ট ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কয়েক বছর শিক্ষকতা করেছেন। ট্রাম্পের সঙ্গে তার উষ্ণ সম্পর্ক রয়েছে।
জন পলসন, সম্ভাব্য অর্থমন্ত্রী
সম্ভাব্য অর্থমন্ত্রী হিসেবে ট্রাম্পের বিবেচনায় আসতে পারেন জন পলসনও। হেজ ফান্ড ম্যানেজার পলসন একজন ধনকুবের ও ট্রাম্পের অন্যতম দাতা। তিনি দীর্ঘদিন ধরে কর কমানো এবং নিয়ন্ত্রণ শিথিল করার পক্ষপাতী।
ল্যারি কুডলো, সম্ভাব্য অর্থমন্ত্রী
ফক্স বিজনেস নেটওয়ার্কের একটি অনুষ্ঠানের উপস্থাপক ল্যারি কুডলোকেও অর্থমন্ত্রীর পদে দেখা যেতে পারে। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের বেশির ভাগ সময় তার প্রশাসনের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন কুডলো।
রবার্ট লাইথাইজার, সম্ভাব্য অর্থমন্ত্রী
ট্রাম্পের অনুগত ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত রবার্ট লাইথাইজারকেও অর্থমন্ত্রী বা ট্রেজারি সেক্রেটারি করা হতে পারে। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছিলেন লাইথাইজার। ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রশাসনে তাকে প্রায় নিশ্চিতভাবেই আমন্ত্রণ জানানো হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। হয় অর্থমন্ত্রী না হয় পুরোনো দায়িত্বেও দেখা যেতে পারে তাকে।
হাওয়ার্ড লুটনিক, সম্ভাব্য অর্থমন্ত্রী
ট্রাম্পের সম্ভাব্য অর্থমন্ত্রী হতে পারেন হাওয়ার্ড লুটনিক। তিনি ট্রাম্পের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণসংক্রান্ত কার্যক্রমের কো-চেয়ার ও আর্থিক সংস্থা ক্যান্টর ফিটজেরাল্ডের দীর্ঘদিনের প্রধান নির্বাহী লুটনিক। শুল্ক ব্যবহারসহ ট্রাম্পের অর্থনৈতিক নীতির ভূয়সী প্রশংসাকারীদের একজন লুটনিক।
রিচার্ড গ্রেনেল, সম্ভাব্য জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা
ট্রাম্পের পররাষ্ট্র নীতি উপদেষ্টাদের একজন রিচার্ড গ্রেনেল। ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত গ্রেনেলকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা করতে পারেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে জাতীয় গোয়েন্দা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন গ্রেনেল। এ ছাড়া তিনি জার্মানিতে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বও পালন করেন।
রবার্ট ও’ব্রায়েন, সম্ভাব্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী
রবার্ট ও’ব্রায়েন ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের সর্বশেষ (চতুর্থ) জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ছিলেন। ও’ব্রায়েন সম্ভবত পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিংবা অন্য শীর্ষ পররাষ্ট্রনীতি ও জাতীয় নিরাপত্তাসংক্রান্ত পদে নিয়োগ পেতে চাইছেন। গত মে মাসে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন তিনি।
বিল হ্যাগারটি, সম্ভাব্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী
টেনেসির সিনেটর বিল হ্যাগারটি ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের দায়িত্ব গ্রহণসংক্রান্ত কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদের জন্য হ্যাগারটিকে একজন শীর্ষস্থানীয় প্রতিযোগী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। তিনি মূলত রিপাবলিকান পার্টির সব উপদলের সঙ্গে জোরালো সম্পর্ক বজায় রাখছেন। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে জাপানে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি।
মার্কো রুবিও, সম্ভাব্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে রুবিওকে বেছে নিতে পারেন ট্রাম্প। মার্কো রুবিও ফ্লোরিডা থেকে নির্বাচিত সিনেটর। ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী হতে মাঠে নেমেছিলেন তিনি। ট্রাম্পের নীতির সঙ্গে রুবিওর নীতির ব্যাপক মিল রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সিনেটের বৈদেশিক বিষয়সংক্রান্ত কমিটিতে আছেন তিনি।
মাইক ওয়াল্টজ, সম্ভাব্য প্রতিরক্ষামন্ত্রী
মাইক ওয়াল্টজ ফ্লোরিডা থেকে নির্বাচিত কংগ্রেস সদস্য। মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে নিজেকে চীনের অন্যতম প্রধান কট্টর সমালোচক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনি। চীন-সম্পর্কিত বিভিন্ন বিল প্রতিনিধি পরিষদে আনার ব্যাপারে তার ভূমিকা দেখা গেছে। মার্কিন সেনাবাহিনীতে কাজ করার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা আছে তার। প্রতিরক্ষামন্ত্রীর পদে তার সম্ভাবনা প্রবল বলে মনে করা হচ্ছে।
মাইক পম্পেও, সম্ভাব্য প্রতিরক্ষামন্ত্রী
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে মাইক পম্পেও সিআইএর পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। পরে তাকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী করেছিলেন ট্রাম্প। এবার জাতীয় নিরাপত্তা, গোয়েন্দা বা কূটনীতি সংশ্লিষ্ট পদে তাকে বসাতে পারেন ট্রাম্প।
টম কটন, সম্ভাব্য প্রতিরক্ষামন্ত্রী
টম কটন হার্ভার্ড কলেজ ও হার্ভার্ড ল স্কুলে পড়েছেন। তিনি সেনাবাহিনীতে কাজ করেছেন। ট্রাম্প দাতাদের পছন্দের মানুষ আরকানসাসের এই সিনেটর। তাকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে বিবেচনা করতে পারেন ট্রাম্প।
কিথ কেলগ, সম্ভাব্য ন্যাশনাল সিকিউরিটি
জাতীয় নিরাপত্তাসংক্রান্ত কোনো পদে আসতে পারেন কিথ কেলগ। তিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের চিফ অব স্টাফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি-বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে টম হোমানকে বিবেচনায় নিতে পারেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি।
চাদ ওলফ, সম্ভাব্য হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে প্রায় ১৪ মাস হোমল্যান্ড সিকিউরিটি-বিষয়ক ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী ছিলেন চাদ ওলফ। তাকেও যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি-বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে বিবেচনায় নিতে পারেন ট্রাম্প।
প্রতিনিধি পরিষদের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি-বিষয়ক কমিটির বর্তমান চেয়ারম্যান এবং ট্রাম্পের সমর্থক হিসেবে পরিচিত মার্ক গ্রিন। তাকেও হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারির জন্য বিবেচনায় নিতে পারেন ট্রাম্প।
জন র্যারটক্লিফ, সম্ভাব্য অ্যাটর্নি জেনারেল
সাবেক কংগ্রেস সদস্য ও প্রসিকিউটর হিসেবে কাজ করা জন র্যা টক্লিফ অ্যাটর্নি জেনারেলের সম্ভাব্য প্রার্থী। তিনি ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে তিনি ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
মাইক লি, সম্ভাব্য অ্যাটর্নি জেনারেল
সাবেক প্রসিকিউটর মাইক লিকেও অ্যাটর্নি জেনারেল পদে দেখা যেতে পারে। উটাহ রাজ্যের বর্তমান সিনেটর তিনি।
সুসি উইলস, সম্ভাব্য চিফ অফ স্টাফ
হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের চিফ অব স্টাফ পদে সুসি উইলসকে দেখা যেতে পারে। তিনি ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচার কার্যক্রমের সহব্যবস্থাপক।
ব্রুক রোলিন্স, সম্ভাব্য চিফ অফ স্টাফ
ট্রাম্পের ডোমেস্টিক পলিসি কাউন্সিলের সাবেক কার্যনির্বাহী পরিচালক ব্রুক রোলিন্সও চিফ অফ স্টাফ পদে প্রতিযোগী। ট্রাম্পের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিগত সম্পর্ক রয়েছে।
কাশ প্যাটেল, সম্ভাব্য জাতীয় নিরাপত্তার পদ
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে প্রতিরক্ষা এবং গোয়েন্দা সম্প্রদায়ের বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার ভূমিকা পালন করেছিলেন কাশ প্যাটেল। ট্রাম্পের কিছু সহযোগী প্যাটেলকে সিআইএ পরিচালক হিসেবে দেখতে চান। তবে তিনি বিতর্কিত হওয়ায় সিনেটের অনুমোদন পেতে তা চ্যালেঞ্জিং হতে পারে।