শিরোনাম: |
গণপূর্ত অধিদপ্তরে সর্বগ্রাসী সিন্ডিকেট চক্র গড়ে তুলে সীমাহীন দুর্নীতি আর অনিয়মের মাধ্যমে শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ গড়ে তোলার অভিযোগ রয়েছে গণপূর্ত অধিদপ্তরের ঢাকা গণপূর্ত বিভাগ-৪ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাইফুজ্জামান চুন্নুর বিরুদ্ধে। দুর্নীতি, নিয়োগ, বদলি, টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ, কমিশনের বিনিময়ে কাজ জাগিয়ে নেয়া এবং প্রকল্পের কাজ না করেই অর্থ আত্মসাৎ করার মতোও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। দুর্নীতির মাধ্যমে তিনি রাজধানী ঢাকাসহ নিজ এলাকায় গড়ে তুলেছেন দুর্নীতির সাম্রাজ্য।
জানা যায়, গণপূর্ত অধিদপ্তরের মিরপুর ডিভিশনের পূর্ত সার্কেলে মিরপুর পাইকপাড়াস্থ পিডব্লিউডি ট্রেনিং সেন্টার (পুরাতন) এর ২য় তলার সিড়ির পূর্ব পাশের পূর্ব প্রান্তের ৭ ও ৮ নম্বরের দুটি কক্ষকে আইবি বাংলোতে রূপান্তরের লক্ষ্যে সংস্কার ও আধুনিকায়নের জন্য একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেয়া হয়। কিন্তু গত বছরের ২৩ আগস্ট কোনরূপ কাজ না করেই উক্ত কাজের জন্য ২০২২-২৩ অর্থ বছরের বরাদ্ধকৃত অর্থ আত্মসাত ও অনিয়মের একটি অভিযোগ পায় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। উল্লেখ্য সেই সময় মিরপুর ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী ছিলেন মো. সাইফুজ্জামান চুন্নু।
এই অভিযোগের বিষয়ে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মুহাম্মদ সোহেল হাসানকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। তদন্তের এক পর্যায়ে মুহাম্মদ সোহেল হাসান উক্ত আইভি বাংলো পরিদর্শনকালে দেখতে পান, উক্ত কক্ষগুলোতে কোনরূপ কাজ না করেই ২০২২-২৩ অর্থ বছরের বরাদ্ধকৃত অর্থ ইতোমধ্যেই উত্তোলন করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে প্রদান করা হয়েছে। তবে ৭ নম্বর কক্ষে দুই শ্রমিককে তড়িঘড়ি করে ডেকোরেশনের কাজ শুরু করতে দেখা যায়। তখন তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত নতুন করে কোনো কাজ না করার জন্য নির্বাহী প্রকৌশলীসহ অন্যান্যদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশনা অমান্য করে রাতের আঁধারে গোপনে উক্ত সংস্কার কাজ চলেছে বলে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছে।
পরবর্তীতে ওই দুটি কক্ষে যেনো আর কোনো সংস্কার কাজ না করতে পারে সেজন্য গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী (সংস্থাপন) আহমেদ আব্দুল্লাহ নূর এবং নির্বাহী প্রকৌশলী (ই/এম) পবিত্র কুমার দাশ এর সহযোগীতায় উক্ত কক্ষ দুটিকে সিলগালা করার নির্দেশ দেয়া হয়। যা গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (উন্নয়ন অধিশাখা-০৯) মো. মাহমুদুর রহমান হাবিবকে অবহিত করা হয়।
এদিকে কক্ষ দুটি সিলগালা করার একদিন পরই গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মুহাম্মদ সোহেল হাসান স্বাক্ষরিত আরেকটি চিঠিতে ওই কক্ষ দুটির সিলগালা খুলে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, ঢাকা গণপূর্ত বিভাগ-৪ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাইফুজ্জামান চুন্নু তার প্রভাব খাটিয়ে এক দিনের মধ্যেই সিলগালা খুলে ফেলেছে এবং তড়িঘড়ি করে শুরু হওয়া ডেকোরেশনের কাজ আবার চালাচ্ছেন।
জানা গেছে, গণপূর্ত অধিদপ্তরের মিরপুর ডিভিশনের পূর্ত সার্কেলে থাকাকালীন বদলি হওয়ার আগমুহূর্তে প্রকল্পের এই অর্থ উত্তোলন করেন প্রকৌশলী সাইফুজ্জামান চুন্নু। বর্তমানে মিরপুর ডিভিশনের পূর্ত সার্কেলে দায়িত্বে আছেন রাশেদ আহসান।
অভিযোগ আছে, গণপূর্ত অধিদপ্তর মিরপুর বিভাগে থাকাকালে সবচেয়ে বেশি কাজ ভাগিয়ে নিয়েছেন চুন্নু। পরবর্তীতে ঢাকা গণপূর্ত বিভাগ-৪ এসেও বড় বড় কাজ ভাগিয়ে নিচ্ছেন তিনি। এর মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকা। সাইফুজ্জামান চুন্নু সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদের কাছের লোক বলে পরিচয় দিতেন। গণপূর্তের ঢাকা মেট্রো জোনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গে যোগসাজশে টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন কাজ ভাগিয়ে নেন। বর্তমানে তিনি গণপূর্ত প্রধান প্রকৌশলীর আস্থাভাজন হয়ে ওঠার জন্য তৎপরতা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ আছে।
সূত্র জানায়, ২০২২ সালে মিরপুর বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী থাকা অবস্থায় সাইফুজ্জামান চুন্নু ১৭৬টি কাজের চাহিদার বিপরীতে ১২ কোটি টাকা পেয়েছিলেন। তখন মিরপুরের আবাসিক এলাকার অধিকাংশ ভবন নতুন থাকায় সেই ১২ কোটি টাকা খরচ করার তেমন সুযোগ না থাকায় এর বেশিরভাগ টাকাই আত্মসাত করেছেন তিনি। এর আগে ঢাকার বাইরে থাকা অবস্থায় ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে ১৯ কোটি টাকার দরপত্র আহ্বানের মতো অনিয়ম করেছেন তিনি। তাই তখন তাকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
জানা যায়, বিভিন্ন অনিয়ম আর দুর্নীতির মাধ্যমে স্বল্প সময়ে কোটি কোটি টাকার সম্পদ গড়ে তুলেছেন প্রকৌশলী সাইফুজ্জামান চুন্নু। গণপূর্তের কর্মকর্তাদের অভিযোগ, গণপূর্ত অধিদপ্তরে একটি সিন্ডিকেট চক্র গড়ে তুলেছেন চুন্নু। এই সিন্ডিকেটের মাধ্যেমে গণপূর্ত অধিদপ্তর নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। দুর্নীতি ও অনিয়মের টাকায় গড়ে তুলেছেন একাধিক বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। খোজ নিয়ে জানা গেছে, চুন্নু নিজ এলাকা পটুয়াখালীতে গড়ে তুলেছেন নাহিয়ান ব্রীকস ফিল্ড, পটুয়াখালী কলেজ রোডে দুইতলা বাড়ি, পটুয়াখালি সদর উপজেলার কমলাপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ ধারান্দি গ্রামে পাঁচ একর জমি, পটুয়াখালীতে নেক্সাস নামে একটি গামেন্টসের শোরুম, সাভারে ১০ কাঠার একটি প্লট, ঢাকার ধানমন্ডিতে সেন্ট্রাল রোডে ও বেইলী রোডে দুটি ফ্ল্যাট। এছাড়াও রয়েছে নামে বেনামে অসংখ্য সম্পদ।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে বুধবার (২৪ এপ্রিল) গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতার এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (উন্নয়ন অধিশাখা-৯) মুহাম্মদ সোহেল হাসানকে একাধিকবার ফোন করলেও তাঁরা ফোন ধরেননি, পরে তাদের মোবাইল ফোনে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও কোন জবাব পাওয়া যায়নি।
অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রকোশলী মো. সাইফুজ্জামান চুন্নুর সঙ্গে মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) দুপুরে তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে ঐদিন সন্ধ্যায় এই প্রতিবেদকের সঙ্গে হোয়াটস্অ্যাপে কথা বলবেন বলে জানান। কিন্তু সন্ধ্যার পর তার হোয়াটস্অ্যাপে অভিযোগের বিস্তারিত জানিয়ে মেসেজ দিলেও তিনি মিটিংয়ে আছেন বলে পরবর্তীতে আর যোগাযোগ করেননি।
দেশসংবাদ/ডিএন/এমএম/এমএইচ
আপনার মতামত দিন
|